এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের মতো আবারও ড. ইউনূসকে মহানায়ক বানানোর তৎপরতা শুরু করেছে মার্কিন লবি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ইউনূসের জন্য মাঠে নেমেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ: শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা।

অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। সে সময় দুদক সচিব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তদন্তের স্বার্থে ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে দুদকের মুখোমুখি করার। এই যখন অবস্থা তখন ড. ইউনূসকে মহানায়ক বানানোর তৎপরতা শুরু করেছে মার্কিন লবি।

গত ৬ অক্টোবর ইউনূসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্রনিউজ। যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডে দেশটির একটি এনজিওর অর্থায়নে চলে অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদনটি করেন বিতর্কিত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।

এর এক সপ্তাহ পর ১৩ অক্টোবর ইউনূসকে মহানায়ক বানিয়ে খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট। সেখানে বলা হয়, নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ মাসে তাকে দুদকে উপস্থিত হতে হবে, আসতে পারে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও।

ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদন ধরেই মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচপ্রধান কেনিথ রথ টুইট করেন। যেখানে ইউনূসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মূলত বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়েছিল।

কেনিথের পথেই হেঁটেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিসটফ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচপ্রধান কেনিথের টুইটকে যুক্ত করে রিটুইট করেন তিনি। সেখানে তিনি লেখেন: বিশ্বের জন্য অনেক করেছেন ড. ইউনূস।

ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়। এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের সময় প্রধান দুই দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সে সময় গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে ঘুরেফিরে এসেছে তার নাম। অথচ ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতি নিয়ে দুদক যখন আইন অনুযায়ী এগোচ্ছে, তখন মার্কিন লবির এই তৎপরতা ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।